ইচ্ছে করেই বিরক্তিকর করে তৈরি করা হয়েছে হোটেলের ঘরগুলো। ঢুকলেই বুঝবেন ,হোটেলটার ঘরগুলো যে অদ্ভুত। অন্য সব হোটেলের মতো আরাম করে সময় কাটানো যাবে না। আর ছোট আকারের বিছানাগুলোতে হাত-পা ছড়িয়ে ঘুমানোরও উপায় নেই। বাথরুমের দরজাও লাগে না। সব সুযোগ-সুবিধাই কম। মনে হতে পারে, একটু ভালো করে বানালেই তো হতো। খুব রাগ লাগতে পারে!
এর পরিকল্পনাকারি ক্রিস্টোফার স্যামুয়েল নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘কেউ এক রাতের বেশি এই হোটেলে কাটাতে চাইবেন না। কারণ নতুনত্বটা খুব বেশিক্ষণ মুগ্ধ করবে না গ্রাহকদের।’
আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে, কেন এভাবে হোটেল তৈরির পরিকল্পনা করলেন স্যামুয়েল? তবে কারণটা শুনলে বিষাদে মন ছেয়ে যেতে পারে আপনার।
আর্ট বিঅ্যান্ডবি নামের হোটেলের ১৯ জন নকশাকারের মধ্যে স্যামুয়েল একজন। গ্রাহকদের একটি পরিস্থিতির মধ্যে রেখে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষকে কত সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়, তাদের অনুভূতি কেমন হয়।
তিনি বলেন, আমাকে দুজন স্থানীয় কাউন্সিল গৃহহীন করে ফেলেছিলেন। তাঁরা আমার যত্ন নেওয়ার খরচ এবং প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানো নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। আমি ওই হোটেল ঘরটিতে স্বাধীনভাবে নড়াচড়া করতে পারতাম না। খুব ছোট ছিল ঘরটা। এমনকি দরজা লাগাতেও কষ্ট হতো। আমি টেবিলে বসতে পারতাম না, বিছানাও ব্যবহার করতে পারতাম না। আমাকে হুইল চেয়ারে ঘুমাতে হতো। বাথরুমের দরজা লাগানো যেত না। টয়লেট ব্যবহার করতে পারতাম না। এমনকি গোসল করতে পারতাম না। কারণ সেখানে কোনো পানির কল ছিল না। কেবল একটা ঝরনা ছিল।
তবে নিজের জীবনের ওপর দিয়ে যাওয়া এই ভয়ংকর ঘটনার শোধ নিতে চাননি স্যামুয়েল। বরং এমনভাবেই নিজেদের হোটেলের নকশা করেছেন যেন আনন্দই পান গ্রাহকেরা। তাঁদের মুখের হাসি এতটুকু বিচলিত করে না স্যামুয়েলকে। নিজের জীবনের কষ্ট গ্রাহককে দেওয়ার ইচ্ছে তাঁর নয়। কেবল অনুভূতিটা বোঝাতে চান। তিনি বলেন, কেউ যদি আমার মতো অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে না যান, তবে কেন আমার মন খারাপ হবে? বিষয়টি মানুষকে এটা নিয়ে ভাবানোর জন্য।
স্যামুয়েল বলেন, এখানে টিভি দেখার জন্য একটি বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি যদি বিছানার পাশে লাইট, শেলফ বা টেবিলের মতো মৌলিক জিনিসগুলো ব্যবহার করতে চান, তবে আপনাকে কৌশল ভেবে বের করে নিতে হবে। তবে হুইলচেয়ারে চলাফেরা করে যে মানুষটি, সে কিন্তু সহজেই বিষয়টি বুঝতে পারবে।
যে হোটেলে থাকাটাই ঝামেলা!!!
Reviewed by Life Line
on
9:48 AM
Rating:


No comments: